অর্শ কি এবং কেন। এলোপ্যাথিক ও হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা বা এর প্রতিকার কি। অর্শ এমন একটি রোগ যাতে পৃথিবীর শতকরা ৮০ জন ভোগেন। কিন্তু খুব কম জনই এর চিকিৎসা করান।

 অর্শ কি এবং কেন। এলোপ্যাথিক ও হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা বা এর প্রতিকার কি। অর্শ এমন একটি রোগ যাতে পৃথিবীর শতকরা ৮০ জন ভোগেন। কিন্তু খুব কম জনই এর চিকিৎসা করান। 

এর কারণ অনেকে এই রোগের কথা বলতে দ্বিধা বোধ করেন বা বলতে লজ্জা করেন। 


মলদ্বারের ভেতরে বা বাইরের চারপাশের শিরাগুলো ফুলে মটরদানা কিংবা আঙ্গুরের মতো কিংবা ছাগলের বাঁটের মতো ছোট ছোট টিউমার হলে তাকে অর্শ বা হেমোরয়েড বা পাইলস বলে।


অবস্থা ভেদে অর্শ প্রধানত দুই ধরনের দেখা যায়।যথা— অন্ত:বলি ও বহি:বলি।

এছাড়া এক প্রকার অর্শকে মিশ্রবলি বলে। যেটি উভয় স্থানে থাকে।

অন্ত:বলি-

যে বলি গুহ্য দ্বারের ভিতরে থাকে তাকে অন্ত:বলি বলে। অন্ত:বলি থেকে প্রায় রক্তস্রাব হয়। যা রক্ত অর্শ বলতে পারি। রক্ত অর্শের ক্ষেত্রে পায়খানার সঙ্গে রক্ত, হলদে কিংবা লালচে পানির মতো পদার্থ বের হয়।


বহি:বলি-

যে বলি গুহ্য দ্বারের বাহিরে থাকে তাকে বহি:বলি বলে। বহি:বলি থেকে তেমন রক্তস্রাব হয় না।

এক্ষেত্রে পায়খানার সঙ্গে রক্ত কিংবা লালচে বা হলদে পানি দেখা যায় না। কিন্তু মলদ্বারে চুলকানি, অসহনীয় ব্যথা, জালাপোড়া ও কোষ্ঠকাঠিন্য থাকার কারণে মলদ্বারে ফোলা থাকে।


কারণ : 

নানা কারনে অর্শ হতে পারে। প্রধান কারণ লিভারের মধ্যে এবং ধমনীতে রক্তাধিক্য হলে অর্শ হয়। এ ছাড়া অলস প্রকৃতির লোকের সারা দিন বসে বসে থাকা, ঘিয়ে ভাজা বা অধিক মসলা যুক্ত রান্না খাওয়া, অধিক কোথ দিয়ে পায়খানা করা। ঘন ঘন জোলাপের ওষুধ খাওয়া। মলদ্বারের কৃমির অত্যচারের জন্য বারবার খোটলানো, কাম রিপুর উত্তেজনার কারণে এবং মা-বাবার কারনে বা বংশগত কারনে এই  অর্শ  রোগ হয়।

 যেসব রোগী পাইলস বা অর্শ রোগের সমস্যায় ভোগেন তাদের সাধারণত কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। ডায়রিয়ার সমস্যাও দেখা দিতে পারে। পেটে গ্যাসও জমা হয়, পায়খানা ক্লিয়ার হয় না, পায়খানার সঙ্গে মিউকাস বা আম যায়। গুরুপাক বা মশলাজাতীয় খাবার যেমন কোরমা-পোলাও, অতিরিক্ত ঝালজাতীয় খাবার ও গরুর গোশত খেলেও হজমে গোলমাল দেখা দেয়। সহজে মলত্যাগ হতে চায় না, মলদ্বারে আঙুল দিয়ে মলত্যাগ করতে হয়। যাদের ‘আইবিএস’ আছে তাদের এই জাতীয় সমস্যা ও পাইলস হতে পারে। মলত্যাগের সময় কিছু মাংসপিন্ড বের হয়ে আবার ভেতরে ঢুকে যায়। অনেকে রোগ নিয়ে ভোগে তারপরও লজ্জায় রোগের কথা প্রকাশ করে না। যার কারণে জীবনের শেষ প্রান্তে এসে কঠিন সমস্যায় পড়তে হয়। তখন অপারেশন ছাড়া আর কোনো গতি থাকে না। দীর্ঘদিনের কোষ্ঠকাঠিন্য, বারবার সুতা কৃমির আক্রমণ, অর্জিন রোগে বেশি দিন ভোগা, মহিলাদের গর্ভাবস্থায় জরায়ুতে চাপ পড়লে, সবসময় বসে কাজ করা,  কোষ্ঠবদ্ধতার কারণে জোরে বেগ দিয়ে মলত্যাগ করা, দীর্ঘদিন রাত জেগে কাজ করা। ইত্যাদি  কারনে অর্শ রোগ হয়।


লক্ষণ :

 সময় সময় মলদ্বার চুলকায়। ধপ ধপ  করে জ্বালাপোড়া বা  ব্যথা করে। কাটা ফোটার মতো বেদনা, মনে হয়  কাচের গুড়ি লেগে আছে এবং কোমরে বেদনা। মল ত্যাগকালে মলদ্বার থেকে রক্তস্রাব হয়। কোনো কোনো সময় রক্তস্রাব হয় না।


এলোপ্যাথিক ও হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা : 

এলোপ্যাথিতে অর্শের তেমন কোনো সুচিকিৎসা হয় না। অস্ত্রোপচার ছাড়া কোনো গতি নেই। কিন্তু তাতেও রোগ নির্মূল হতে পারে আবার নাও হতে পারে।

বিশেষ করে যাদের পাইলস বড় এবং বাইরে বেরিয়ে আসে, এমন অবস্থায় অপারেশন ছাড়া কোন চিকিৎসা  নেই।

তবে হোমিও মেডিসিনের সাহায্যে চিকিৎসায় আশানুরূপ ফল পাওয়া যায়। আর অপারেশন করলে মলদ্বারের চতুরদিকে তিন জায়গায় বেশকিছু অংশ কাটতে হয়। ফলে অপারেশনের পর প্রচুর ব্যথা হয় এবং মলত্যাগেও অনেক ব্যথা হয়। অনেকের দেখা যায় অনবরত সামান্য রক্ত ও পুঁজের মতো নিঃসরণ হয়। ক্ষতের স্থান শুকাতে দেরি হয়। অপারেশনের পর মলদ্বার ছোট ও সংকুুচিত হয়ে জীবন দুর্বিষহ করে তোলে। পায়খানা আটকে রাখার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলার সম্ভাবনা থাকে প্রবল।  


কিন্তু অপারেশন ছাড়া চিকিৎসা  কেবলহোমিওপ্যাথি ঔষধ দ্বারা সম্ভব। অর্শের হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা নিচে আলোচনা করা হল। 

প্রাথমিকভাবে অভিজ্ঞ চিকিৎসকরা যেসব মেডিসিন নির্বাচন করেন যেমন এলুমিনা, এলো, আর্সেনিক এল, এন্টিম ক্রোড,এমন কার্ব, নাকস ভোম, সালফার, ইস্কিউলাস হিপ, কলিন সোনিয়া, এসিড নাইট্রেকাম, মেডোরিনাম 

ইত্যাদিসহ আরো অনেক ওষুধ লক্ষণের উপর আসতে পারে। এসব ওষুধ বিশেষজ্ঞ হোমিও চিকিৎসক ছাড়া নিজে নিজে ব্যবহার করলে রোগ আরো জঠিল আকারে পৌঁছতে পারে।


পাইলস বা অর্শের হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা

Aesculus Hip Q:

রক্ত খুবই স্বল্প বা রক্ত স্রাব তেমন একটা হয় না কিন্তু কোমরে বেদনা এই রোগের নিত্য সহচর, মলদ্বারে টাটানি ব্যাথা, মলত্যাগের পরেও ব্যাথা বা জ্বালা তাহলে Aesculus Hip Q । সকালে ও সন্ধ্যায় অল্পজলে ১০ফোঁটা করে সেবন । এছাড়া 30 বা 200 মাত্রা  প্রয়োজন হিসাবে।


Hamamelis Q:

মলত্যাগের সময় খুব রক্তপাত হয় ও সঙ্গে খুব ব্যাথা অনুভব হয় তাহলে Hamamelis Q সকাল সন্ধ্যা ১০ ফোঁটা  করে সেবন । 


Acid Nit 200:

খিট খিটে স্বভাব, শীত কাতর, প্রসাবে তীব্র গন্ধ, সহজে ঠান্ডা লাগা।

মলদ্বারে যেন কাঁটা ফোটানো আছে এরকম মনে হয় তাহলে Acid Nit 200 সকাল সন্ধ্যা ২/৩ ফোঁটা খালি পেটে সেবন। প্রয়োজনে উচ্চ মাত্রা।


Nux Vom 30:

যারা অতিরিক্ত চা কফি খান, সারাদিন বসিয়া থাকেন, কোনো কাজ বা পরিশ্রম করেন না তাদের অর্শে Nux Vom 30 সকাল সন্ধ্যায় ২/৩ ফোঁটা করে খালি পেটে সেবন । এর সঙ্গে  সালফার পর্যাক্রমে ব্যবহারে সাফল্য বেশী।


Collinsonia Q:

মলের সাথে রক্ত, রক্ত স্রাবীয় অর্শে ইহা মহৌষধ। মলদ্বারে প্রচুর ব্যাথা মনে হয়  যেন কতগুলো কাচের টুকরা মলদ্বারে আছে, ও জ্বালা ভাব, কোষ্ঠকাঠিন্য, কোষ্টবদ্ধ শুকনা মল। পেটে গ্যাস জমে – Collinsonia Q সকালে ও সন্ধ্যায় অল্প জলে দিয়ে সেবন । পুরাতন রোগে উচ্চ শক্তি।


Paeonia off Q:

অর্শ সহ মলদ্বারে ফাটা ঘা , রোগীর মলদ্বারে সবর্দা রস ঝরে, পুজ রক্ত পড়ে, ভিজা ভিজা থাকে, ফিশ্চুলা, ফিশার তাহলে Paeonia off Q সকাল সন্ধ্যা ১০ফোঁটা করে সেবন ।


Calcarea Fluorica 200:

সর্ব প্রকার অর্শে এই ঔষধ কার্যকরী।

কোষ্ঠ কাঠিন্য সহ অন্তর্বলী যুক্ত অর্শে Calcarea Fluorica 200 সকাল সন্ধ্যায় ২/৩ ফোঁটা সেবন করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।


Sulphur 30:

অনেকদিনের পুরনো অর্শে ভুগলে , মলদ্বারে হুলফোটানো ব্যাথা থাকলে Sulphur 30 তিন মাত্রা সেবন।


Acid Mur 200:

মেজাজ খিট খিটে। সামান্য  কারনে রাগিয়া উঠে। গরম সেকে বা পানিতে সামান্য উপশম বোধ। প্রসূতি বা শিশুদের অর্শে, প্রশ্রাবের সময় বলী বেরিয়ে আসে, মলদ্বারে খুব ব্যাথা থাকলে Acid Mur 200 সকাল ও সন্ধ্যেতে ২/৩ ফোঁটা করে সেবন।


এই রোগের সঠিক চিকিৎসা সঠিক সময় না করালে সারা জীবন ভুগতে হয়। এর ফলে শরীরে রক্তশূন্যতা বা মলদ্বারে সংক্রমণ ও হতে পারে। এর চরম পরিণতি হিসেবে রেকটাম (rectum)ক্যান্সার ও হতে পারে। 

সুতরাং খুব তরুণ অবস্থা থেকে এর চিকিৎসা করালে এর থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।


Dr. Md Sheerajul Islam
DHMS. BSc (Hon) MSc (Math).
LLB. LLM, MBA
Cell:+88 01976594935(Whatsup for SMS)
Email: sheerajulislam@gmail.com
https://globalbdadvise.blogspot.com
https://globalbdad.blogspot.com
fb:https://www.facebock.com/sheerajul.islam
https://www.youtube.com/AlibabaBTV

Thanks for Watching.

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

বাংলাদেশের বিভাগগুলোর পুর্নবিন্যাশ করা জরুরী।

নতুন সংবিধান ও রাষ্ট্রব‍্যবস্থা চাই। 4

কানাডা এখন বাংলাদেশীদের জন্য স্বপ্নের দেশ।