ব্ল্যাক ফাঙ্গাস
ব্ল্যাক ফাঙ্গাস
ব্ল্যাক ফঙ্গাস এক ধরণের কালো ছত্রাক। অনেকগুলোর ছত্রাকের ফ্যামিলিকে একসাথে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস বিবেচনা করা হয়। এদের রঙ কালো বর্ণের, একত্রে এক স্থানে অনেকগুলো ছত্রাক একত্রে জন্মে থাকে।
এধরনের ফাঙ্গাল ইনফেকশন খুবই বিরল। সকলের ক্ষেত্রে এমন ইনফেকশন খুব কম দেখা যায় এবং এগুলো সব স্থানেও জন্মায় না।
সার বা গোবরে এদের জন্মানোর হার বেশি।
যেসব স্থানে এরা ইনফেকশন ঘটায়:
এধরনের ফাঙ্গাস বিভিন্ন স্থানে ইনফেকশন ঘটাতে পারে।
ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের লক্ষণ:
লক্ষণগুলো মূলত আক্রান্ত স্থানের উপর নির্ভর করে।
ফুসফুসে আক্রান্ত করলে, এরা ফুসফুসের ঐ স্থানে পঁচন ঘটায়। যার ফলে ক্যাভিটি তৈরী হয় এবং এর মাধ্যমে রক্ত নালীর সংস্পর্শে এরা চলে আসতে পারে।
ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের রঙ কালো বর্ণের, তাই কফ বা নাক দিয়ে বের হওয়া নিঃসরণ কালচে বর্ণের হবে।
চামড়ায় হলে, এই স্থান কালো হয়ে যায় এবং পচতে শুরু করে।
চোখে হলে, চোখের পাতা ঝুলে যায়। চোখ দিয়ে কালচে পানি পড়ে।
জ্বর ও শরীর দূর্বল অনুভূত হওয়া।
মুখ ফুলে যাওয়া, মাথা ব্যাথা হওয়া, নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া এমনকি নাকে কালো ঘা হওয়া।
শ্বাসকষ্ট ও বুকে ব্যথা হওয়া।
পেটে ইনফেকশন হলে বমি বা রক্তক্ষরণ হতে পারে।
বর্তমান প্রেক্ষাপট:
বর্তমানে করোনা আক্রান্ত রোগীদের ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা বেড়ে চলেছে।
ভারতের পরিসংখ্যানের দিকে নজর দিলে বুঝা যাবে, তাদের দেশে এই রোগে আক্রান্ত এর সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।
উল্লেখ্য যে, ব্ল্যাক ফাঙ্গাস নতুন ধরনের কোনো ফাঙ্গাস নয়। এরা পূ্র্বেও ছিলো। কিন্তু বর্তমানে এটি নিয়ে এতো কথা হওয়ার মূল বিষয় হচ্ছে- এতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা পূর্বের তুলনায় অনেক বেশি বেড়ে গেছে।
এবার দেখে নেওয়া যাক ব্ল্যাক ফাঙ্গাস মূলত কিভাবে ছড়ায়:
এরা স্পোরের মাধ্যমে ছড়িয়ে থাকে।
এদের স্পোর কোনোভাবে যদি রক্তে মিশে যায় (মুখগহ্বর বা নাসারন্ধ্র), তখন শরীরে এই ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
এরা ফুসফুসকে আক্রান্ত করে থাকে।
এরা সাইনাস (বায়ুপূর্ণ কুঠুরিতেও সংক্রমণ ঘটাতে সক্ষম। এমনটি ঘটলে পরবর্তিতে এরা খুব সহজেই আমাদের মস্তিষ্কে বিস্তার লাভ করতে পারে।
এরা মুখগহ্বর দিয়ে প্রবেশ করতে পারার কারণে এরা পেটে যাওয়ার সম্ভাবনাও থেকে যায়।
যাদের ক্ষেত্র এমনটা বেশি হয়:
অ্যান্টিবায়োটিক ও স্টেরয়েড জাতীয় ঔষধ যারা বেশি নিয়ে থাকে।
প্রি-মাচিউর বেবী (একমাসের কম বয়স)।
শরীরের কোনো ক্ষতস্থানে।
সিস্টেমিক সার্কুলেশন (রক্তের মাধ্যমে) আমাদের শরীরের যেকোনো স্থানেই এরা যেতে পারে যেমন: মস্তিষ্ক, হৃদপিন্ড, স্প্লিন ইত্যাদি। কারণ এধরণের শরীরের অংশে রক্ত সঞ্চালন অনেক বেশি, তাই এরা খুবই সহজেই এসব স্থানে যেতে পারে।
যাদের ক্ষেত্রে এই ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি:
যাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম।
ডায়াবেটিস রোগীদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকায়, তাদের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
ভারতে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস ছড়ানোর মূল কারণ:
ভারতে যেহেতু করোনা আক্রান্ত রোগী অনেক তাই তাদের নিয়মিত অ্যান্টিবায়োটিক, স্টেরয়েড জাতীয় ঔষধ বেশি দেওয়া হয়েছে।
এদের মধ্যে অনেকের ডায়াবেটিস, অন্যান্য রোগ ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম এমন অনেক রোগী রয়েছে।
উল্লেখ্য, ভারতে ইতিমধ্যেই সবাই জেনেছি-
তাদের অনেকেই গোমূত্র পান, গোবরে গোসল, এগুলো গায়ে মাখলে করোনা কমে যাবে বা করোনাতে তাদের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবণা কম, এমন বিশ্বাস নিয়ে এমনটা করে যাচ্ছে।
ব্ল্যাক ফাঙ্গাস যেহেতু গোবরে বেশি জন্মায়, তাই ভারতে এমন কর্মকাণ্ডের জন্য ব্ল্যাক ফাঙ্গাস ছড়ানো যার অন্যতম প্রধান কারণ।
কারণ, এমনটি না হলে পৃথিবীর প্রায় সকল দেশেই করোনা রোগীদের স্টেরয়েড বা অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হচ্ছে। তাহলে সেসকল স্থানেও এর ছড়ানের হার অনেক বেশি হওয়ার কথা ছিলো।
সুতরাং, ভারতে এভাবে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস ছড়ানের অন্যতম কারণ - গোবর বা গোমূত্র।
আমাদের করণীয়:
ব্ল্যাক ফাঙ্গাস পূৃর্বেও যেহেতু ছিল, কিন্তু এখন হঠাৎ করেই এরা বেড়ে গিয়েছে।
আমাদের করণীয় হচ্ছে:
ব্ল্যাক ফাঙ্গাস যেন না জন্মায়, তাই আমাদের চারপাশের পরিবেশ, মূলত যেসকল স্থানে আমাদের যাওয়া-আসা ও কাজ থাকে যেমন: বাসা, অফিস, বাগান ইত্যাদি পরিষ্কার করে রাখা এবং শুষ্ক রাখা।
স্টেরয়েড, অ্যান্টিবায়োটিক জাতীয় ঔষধের ব্যবহার কমিয়ে আনা।
বাগানের কাজ যারা করে থাকেন বা বাসা বাড়িতে বাগানে অনেকেই গাছে সার বা গোবর ব্যবহার করে থাকেন, তাদের ক্ষেত্রে শরীর আবৃত রাখে এমন পোশাক, মাস্ক, গ্লাবস পড়ে কাজ করা। কাজ শেষে ভালোমতো পরিষ্কার হওয়া।
কাদাযুক্ত স্থানে কাজ করলে, প্লাস্টিক বুট ব্যবহার করা।
কনস্ট্রাকশন সাইট বা যেসকল স্থান ভিজা বা স্যাঁতস্যাতে বেশি থাকে, সেগুলো শুষ্ক রাখা।
এগুলো করার মাধ্যমে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের জন্মানো কমানো সম্ভব।
ব্ল্যাক ফাঙ্গাস হলে যেসকল ঔষধ ব্যবহার করা হয়:
ফার্স্ট লাইন থেরাপি হিসেবে মূলত ইন্ট্রাভেনাস বা সিস্টেমিক এন্টিফাঙ্গাল ডাক্তাররা দিয়ে থাকেন।
এছাড়াও ফানজিসিডাল ড্রাগস বা এন্টিফাঙ্গাল ড্রাগস ব্যবহার করা হয়। কোসাকোনাজল, ইসাভুকোনাজল গ্রুপের ড্রাগসগুলো ওরালি খেতে দেওয়া হয়।
ফ্লকোনাজলও ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
উল্লেখ্য আক্রান্ত স্থান পঁচে গেলে, সার্জারি এর মাধ্যমে পঁচে যাওয়া অংশ অপসারণ করে ফেলতে হতে পারে।
পরিশেষে:
যাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা ও যারা সর্বদা পরিচ্ছন্নতা নিয়ে সচেতন তাদের ক্ষেত্রে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।
কারো যদি এরপরও হয়ে যায়, তখন দেরি না করে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
Dr. Md Sheerajul Islam
DHMS. BSc (Hon) MSc (Math).
LLB. LLM, MBA
Cell: +88 01976594935 (Whatsup for SMS)
Email: sheerajulislam@gmail.com
https://globalbdadvise.blogspot.com
fb: https://www.facebock.com/sheerajul.islam
Thanks for Watching.
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন