কানাডা এখন বাংলাদেশীদের জন্য স্বপ্নের দেশ।
কানাডা এখন বাংলাদেশীদের জন্য স্বপ্নের দেশ।
শিক্ষিত অশিক্ষিত, ধনী গরীব সকলেই এখন কানাডা যাওয়ার জন্য আগ্রহী। যার কাছে যে পথ সহজ মনেহয় তিনি সেই পথে যাওয়ার জন্য চেষ্টা করে থাকেন।
কিন্তু কানাডা আমাদের দেশ থেকে যাকে যে প্রকার ভিসাই দিয়ে থাকুক না কেন সেটি অবশ্যই সেই ব্যাক্তির নিজস্ব যোগ্যতাতে পেয়ে থাকেন। তাদের ভিসা আওতার মধ্যে না পড়লে তারা কাউকেই ভিসা দেয়না তা তিনি যতবড় বাংলাদেশের সুপারস্টার হন না কেন। এটি এমন একটি দেশ যেখানে আপন ভাই সিটিজেন হলেও অন্য ভাইকে স্থায়ীভাবে নিতে পারেনা (যেটি আমেরিকাতে সম্ভব)।
কানাডা দিল্লিকালাড্ডু আমার কাছে মনেহয়। যা খেলেও পস্তাবেন আবার না খেলেও পস্তাবেন। তবে আপনার ইচ্ছাশক্তি ও ধৈর্য শক্তি যদি ভাল হয় তাহলে এই লাড্ডু খেয়ে না পস্তানোর সম্ভাবনাই বেশী।
৩০ বছর আগে হয়ত ভিসা ছাড়া প্লেনে টিকিট কেটেই অনেকে কানাডা এসেছেন। কিন্তু ২০০০ সালের পর থেকে যারা কানাডা আসছেন তাদের যোগ্যতা ও অর্থনৈতিক দিক দিয়ে বেশিরভাগ মানুষই বাংলাদেশে খুব ভাল অবস্থানে ছিলেন। কানাডা ও অস্ট্রেলিয়াতে বাংলাদেশ থেকে যারা স্থায়ী বসবাসের জন্য যায় তাদের কেউই ডলার আয় কিংবা ধনী হওয়ার চিন্তাতে যায় না। তাদের একটাই আশা যেন ভবিষ্যৎ বংশধরদের নিয়ে চিন্তামুক্ত থাকতে পারেন। নতুবা কানাডার চেয়ে দেশে বেশী অর্থ আয় করা মানুষরা কানাডাতে সব ছেড়ে বসবাসের জন্য আসতেন না।
কানাডা আসলে সকলের জন্য সুখের দেশ নয়। আর এজন্য কানাডা আসার আগে আপনাকে জানতে হবে এখানে আপনি খাপ খাওয়াতে পারবেন কিনা ! যদি আপনি খাপ খাওয়ানোর মত যোগ্য হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনি সুখি হবেন, নতুবা আপনাকে পস্তাতে হবে।
প্রথমত কানাডা একটি সম্পূর্ণ আত্মনির্ভরশীল দেশ। এখানে আসার আগে আপনাকে অবশ্যই আত্মনির্ভরশীল হতে হবে। এখানে আপনি কারো কোন সাহায্য পাবেন না। সেই বাসা বাড়ীর সংসারের সকল কাজ থেকে শুরু করে ঘাস কাঁটা এমনকি বেলচা দিয়ে স্নো পরিস্কার পর্যন্ত সব আপনার নিজেকেই করতে হবে। হ্যা সারাদিনের কর্মজীবন শেষে বাসাতে ফিরে এই কাজ গুলো আপনাকেই করতে হবে।
এখানকার আবহাওয়া আমাদের জন্য আর একটি বড় বাঁধা। এটি একটি শীত প্রধান দেশ যেখানে বারো মাসের সিংহভাগ সময় প্রচন্ড ঠান্ডা থাকে। এই ঠান্ডা সহ্য ক্ষমতা থাকতে হবে।
কানাডা জীবন যাপন শুরু করতে গেলেই জব করতে হবে। আর সেই জব পাওয়াটা এখানে সোনার হরিণ। তবে অবশ্যই জব পাওয়া যায় কিন্তু সেটি শিক্ষাগত যোগ্যতা কিংবা সারাজীবনের অভিজ্ঞতার সাথে ম্যাচ করবেনা বেশীরভাগ ক্ষেত্রে। একান্ত কারো রেফারেন্স ছাড়া ভাল কোন জব সহজে পাওয়া যাবে না। আপনি যতবড় ডিগ্রীধারী হয়ে থাকুন, ডাক্তার কিংবা ইঞ্জিনিয়ার কিন্তু আপনি জব পাবেন না সেই যোগ্যতা অনুযায়ী। তবে এই দেশেও রেফারেন্স অনেক কাজে লাগে। যদি পরিচিত কেউ তার কোম্পানিতে আপনাকে রেফারেন্স দেয় তাহলে আপনি ভাল জব পেতে পারেন নতুবা আপনাকে অনেকটা অড জব করে যাত্রা শুরু করতে হবে এবং এই দেশের জব করার অভজ্ঞিতা অর্জন করতে হবে।
কানাডার নিজস্ব পড়াশোনা কিংবা সেই দেশের জবের অভিজ্ঞতা না থাকলে আপনি বড় পজিশন পাবেন না। আর এজন্য আপনাকে এই দেশ থেকে সার্টিফিকেট কোর্স করতে হবে এবং জবের অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হবে। আর এই পড়াশোনা না করলে আপনি দেশে ডাক্তার হলেও কানাডাতে কম্পাউন্ডারের জব পাবেন কিনা সন্দেহ। আর এর মূল কারন কানাডা তাদের নিজস্ব পড়াশোনার ধরণ ছাড়া পৃথিবীর কোন দেশের পড়াশোনাকে মূল্যায়ন করে না। এমনকি আমেরিকার সার্টিফিকেট থাকলেও তারা অনেক ক্ষেত্রে মূল্যায়ন করেনা। তার জন্য আপনি তাদেরকে অহংকারী মনে করবেন তা নয় কেননা তাদের সবকিছুতে ভিন্নতা যা আমাদের পড়াশোনার সাথে ম্যাচ করেনা।
আর এই কারনেই প্রথম কানাডাতে এসে আপনার লাজ শরম অনেকটা বাদ দিয়ে যেকোন জবে ঢুকে যেতে হবে। এই দেশে কাজকে খুব সম্মান করা হয়। আপনি যে কাজই করেন না কেন আপনার সম্মানের কোন ঘাটতি এখানে হবেনা। কোম্পানির মালিক কিংবা বড় পোষ্টধারী কর্মকর্তা আর আপনি নতুন একজন সাধারণ কর্মী তাতে আপনার মালিকের কাছে ছোট চোখে দেখার কোন উপায় নাই। এখানে কাউকে আপনার স্যার বা বস বলতে হবেনা। যে কাজ আপনি করবেন হয়ত প্রয়োজনে অনেক সময় সেই কাজ আপনার মালিকও করবেন।
এখানে অফিসিয়াল পার্মানেন্ট জব ছাড়া বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ঘন্টা হিসাবে বেতন পাবেন। সর্ব নিম্ন প্রতিঘন্টা ১৪ ডলার দেওয়া হয় (প্রভিন্স ভেদে পরিবর্তন হয়)। এখন আপনার যোগ্যতা, রেফারেন্স কিংবা ভাগ্যের উপর নির্ভর করবে আপনি কত ডলার ঘন্টাতে জব পান। আপনি যদি বেশি যাচাই-বাছাই করে সময় পার করেন তাহলে দেশ থেকে আনা টাকা আপনাকে ডলারের মাধ্যমে খরচ করতে হবে। আপনার যখন আয় না থাকবে তখন ডলার ব্যয় অনেক বিশাল লাগবে। কেননা মাস গেলেই বাসা ভাড়া, খাওয়া ও অন্যন্য সকল খরচ। কানাডাতে আয়ের তুলনায় খাওয়া খরচ অনেক কম হলেও বাসা ভাড়া অনেক বেশী (স্থানভেদে)। সর্বনিম্ন আয় যদি আপনি করেন তাহলে ফ্যামিলি নিয়ে টিকে থাকতে পারবেন না। তখন স্বামী স্ত্রী উভয়কেই জব করতে হবে।এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বাংলাদেশীরা সেটি করে থাকেন।
এটি এমন একটি দেশ যেখানে আপনি এককভাবে খুব ধনী হতে পারবেন না। আপনার যত আয় বেশী হবে তত ট্যাক্স বেশী দিতে হবে। এখানে জনগণের চেয়ে সরকার বেশি ধনী। সবকিছুই সরকারের কন্ট্রোলে। আপনার আয় আপনার হাতে আসার আগেই সরকারের কাছে ট্যাক্স চলে যাবে। তবে সরকারের সুষম বন্টনের কারনে এই দেশে গরীর ধনীর পার্থক্য আমাদের দেশের মত নেই।
আপনি যদি নিজেকে স্বাধীনচেতা মনে করেন, আপনার যদি জীবনে টাকা আয় করাই মূখ্য বিষয় না হয়ে থাকে, আপনি যদি আত্মনির্ভরশীল ও সকল কাজ নিজে করার মত যোগ্যতা রাখেন এবং আপনজন ছেড়ে এই দূর পরবাসে থাকতে পারেন তাহলে এই দেশ বাংলাদেশীদের জন্য পৃথিবীর স্বর্গ।
আপনি যে একজন সৃষ্টির সেরা জীব বা মানুষ তা নিজের দেশ বাংলাদেশে সম্মান না পেলেও এই দেশে আপনি ঠিকই পাবেন। কে কালো বর্ণের আর কে সাদা এখানে সেটি বিষয় না। এখানে একটাই বিষয় তিনি মানুষ এবং তিনি সম্মানিত। প্রতিটা ক্ষেত্রে আপনি বাংলাদেশের উল্টো চিন্তা করবেন। বাংলাদেশের যা কিছু খারাপ এখানের সবকিছু উল্টোটা। আপনার ধর্ম নিয়েও এখানে কোন সমস্যা নাই। যার যার ধর্ম সম্মানের সাথে পালন করতে পারবেন। মুসলিমদের জন্য নামাজ কিংবা হিজাবেও এখানে কোন বাঁধা নেই।
এটি এমন একটি দেশ যেখানে প্রত্যেকে আইন ও নিয়ম মেনে চলতে বাধ্য। আর এজন্য প্রতিটি ক্ষেত্রে জবাবদিহিতা থাকার কারনে কেউ সহজে অন্যায়কে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে পারেনা। নাগরিক সচেতনতা এখানে অনেক বেশী।
এখানে রাস্তাঘাটে ইভটিজিং খুবই কম। পথ চলতে যত অন্ধকার গভীর রাত হোক আপনাকে ভয় পেতে হবেনা। এমনকি নারীদের ক্ষেত্রেও। (সাবধানতা অবলম্বন করা মঙল)
এখানে যেকোন সমস্যাতে পড়েন না কেন শুধু ৯১১ কল করলেই আপনার জন্য পুলিশ এসে হাজির হবে। পুলিশ, এ্যাম্বুলেন্স, ফায়ারসার্ভিস প্রতিটা মুহুর্তে আপনার জন্য প্রস্তুত। আপনার বিপদের ধরণ অনুযায়ী সেই সার্ভিস আপনার কাছে আসবে। যদি কিছুই বলতে না পারেন তাহলে সকল সার্ভিস একই সাথে ৫/১০ মিনিটের মধ্যে আপনার নিকট হাজির হবে।
পৃথিবীর উন্নত চিকিৎসা পাবেন সম্পূর্ণ ফ্রিতে (কিছু জিনিস ছাড়া) এছাড়া পৃথিবীর স্বনামধন্য স্কুল কলেজে
আপনার সন্তানকে বিনা বেতনে পড়াতে পারবেন।
সারাজীবন সরকারকে ট্যাক্স দিলেও বৃদ্ধবয়সে সরকার আপনাকে বসিয়ে বসিয়ে খাওয়াবে। এখানে আপনি বেকার থাকলে সরকার আপনাকে ভাতা দিবে (তবে এটি খাওয়া থেকে দূরে থাকা উচিৎ)
এখানে রাতে টেনশন ফ্রিতে ঘুমাতে পারবেন। নামিদামী ব্রান্ডের গাড়ি রাস্তাতে রাতে পড়ে থাকলেও কেউ ধরবেনা ( তবে নেশাগ্রস্ত কিছু ছ্যাচড়া চোর আছে এলাকা ভেদে)।
এখানে খাদ্য ভেজালের চিন্তা করতে হবেনা। মানুষের ক্ষতি হয় এমন কোন খাদ্য এই দেশে নাই। তা সেটি বাংলাদেশ থেকে আসলেও।
এখানে গাড়ি কিংবা মানুষের তুলনায় পর্যাপ্ত রাস্তা ও বাচ্চাদের জন্য খেলার পার্কের অভাব নেই।
এখানে আয়ের উপর নির্ভর করে আপনার জীবনের সকল সখ আহলাদ পূরণ করতে পারবেন। আপনার জীবনের যত দামী ড্রিম কার কিংবা ড্রিম হাউজ থাকুক না কেন তা আপনার হাতের নাগালে। শুধু আপনার আয়ের উপর নির্ভর করবে আপনি তার যোগ্যতা রাখেন কিনা। কেননা এই দেশে এই ধরনের জিনিস কিনতে নগদ টাকা গুনতে হয় না বাংলাদেশের মত। আপনি মাসে মাসে কিস্তি ঠিকমতো দিতে পারলেই আপনার দুয়ারে থাকতে পারে ড্রিমকার কিংবা অন্য বড় কিছু। এখন যার যার আয়ের উপর নির্ভর করবে কে কত মূল্যের জিনিস ডিজার্ভ করতে পারে।
এখানে সারা সপ্তাহ কর্মের শেষে সাপ্তাহিক ছুটিটা খুব আনন্দে কাটাতে পারবেন। চারিদিকে শুধু সৌন্দর্য। আপনার যেখানে যেতে মন চায় ফ্যামিলি নিয়ে লং ড্রাইভে ঘুরে আসুন। তবে এই সমস্ত আমোদ ফুর্তির ছবি ফেসবুকে কম দিবেন। কেননা সারা সপ্তাহে আপনি যে কামলা খাটলেন সেই খবর আপনজন খোঁজ না নিলেও ফুর্তির ছবি দেখে বলবে "আছোতো খুব মজাতে - তুমি কিভাবে বুঝবে মানুষের দুঃখ" 😉
কানাডার জীবন লিখে শেষ করা যাবেনা। এখানে কষ্ট সুখ দুটোই আছে। শুধু নিজেকে মানিয়ে নিতে পারলেই চলবে।
তবে আমি মনেকরি ঢাকা বসবাসের অযোগ্য নগরী, সেখানে বসবাসকারী কেউ যদি কানাডাতে আসে তাহলে তার জন্য দুঃখ লাগবেনা তবে নিজের জন্মস্থান প্রাণের শহরে যদি কেউ ভাল থাকেন তাহলে সেটি ছেড়ে না আসাই ভাল।
আপনার যদি মনটা কোমল হয় তাহলে দেশ ও আপনজন ছেড়ে কোন স্বর্গই আপনার কাছে ভাল লাগবেনা। আপনি কানাডাতে যতবড় বাড়ি কিংবা যত দামী গাড়ি কিনেন না কেন আর সেই বাড়ি গাড়িতে যদি বাবা মা ভাইবোন সহ আপনজন কিংবা বন্ধুবান্ধবকে না উঠাতে পারেন তাহলে সেই স্বর্গের সুখ আপনার কাছে বৃথা হবে।
Dr. Md Sheerajul Islam
DHMS. BSc (Hon) MSc (Math).
LLB. LLM, MBA
Cell:+88 01976594935(Whatsup for SMS)
Email: sheerajulislam@gmail.com
https://globalbdadvise.blogspot.com
https://globalbdad.blogspot.com
fb:https://www.facebock.com/sheerajul.islam
https://www.youtube.com/AlibabaBTV
https://youtube.com/channel/UCtOZgP3dXrDsKaflDqtyZNw8
https://www.linkedin.com/in/md-sheerajul-islam-224b629a
Thanks for Watching
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন